ওয়েন্ডিং-এর বিভিন্ন অবস্থনসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
উলম্ব ওয়েল্ডিংঃ ঊর্ধ্বাভিমুখী কিংবা নিম্নাভিমুখী ওয়েন্ডিং এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সীমাবদ্ধতা আছে। উভয় ক্ষেত্রেই গলিত ধাতু মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঊর্ধ্বতিমুখী উলম্ব ওয়েল্ডিং এর সময় ধাতু আর্কের ভিতর হতে (ক্রাটারের মধ্যে পতিত হয়, তারপর তা ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত) নিচের দিকে গড়িয়ে পড়তে থাকে, এটিই ঊাতিমুখী গতিকে বাধা দান করে উত্তল বিভ এবং গভীর পেনিট্রেশন উৎপন্ন করে।
এ অবস্থার কিছুটা বুনন পন্ডিতে ওয়েন্ডিং করতে করতে উপরের দিকে অগ্রসর হতে হয়।
নিয়তিমূখী উলম্ব ওয়েল্ডিংঃ এ ওয়েল্ডিং এর গতি অত্যন্ত দ্রুত হয়। কারেন্ট অত্যাধিক না হলে আন্ডার কার্ট পড়ে। অবতল আকৃতির ওয়েল্ডিং উৎপন্ন করে। পেনিট্রেশন কম হয় ।
সাধারণতঃ রুট রানের ক্ষেত্রে এ ওয়েল্ড প্রযোজ্য নয়। অন্যান্য রানের ক্ষেত্রে বুননের সময় জোড়ের দুই প্রান্তে ক্ষণিকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নতুবা ধাতু জোড়ের বিড উৎপন্ন হবে না।
কৌণিক ওয়েন্ডঃ যে ওয়েন্ডিং এর ডাল প্রায় ৪৫° সাধারণত তাকে কৌণিক ওয়েন্ডিং ধরা হয় এবং উল অবস্থানের জন্য একই বুনন নীতি অনুমোদিত।
হরিজন্টালঃ হরিজন্ট্যাল ওয়েন্ডিং এ পেনিট্রেশন যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে ক্ষেত্রে ১ম রান কি হোল (Key-hole) বজায় রেখে ধাতু গলিয়ে সম বুনন নীতি মেনে চলতে হবে। অন্যান্য রানের ক্ষেত্রে জোড়ের দুই ধারে সামান্য থেমে থেমে হেলিয়ে দুলিয়ে বুনন করে ওয়েল্ডিং সম্পন্ন করতে হবে।
ওভারহেড ওয়েল্ডিংঃ ওভারহেড ওয়েল্ডিং কোন কঠিন কাজ নয়। সুতরাং ওভার হেড নাম শুনলেই ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আর্ক লেংথ ছোট রেখে ইলেকট্রোডকে সঠিক কোণে ধরে ধাতু জোড় করতে হবে। রুট রানের ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য রয়েছে, ওভার হেড জোড়ের ক্ষেত্রে কারেন্টের পরিমাণ একটু বেশি লাগবে, তবে অত্যাধিক হতে পারবে না। ধাতুর দুই প্রান্ত গলানোর জন্য যে সময় প্রয়োজন বুনন গতিতে শুধু তত সময় ব্যয় করতে হবে। অধিক সময় ব্যয় করা হলে বার্নথ্রো হতে পারে।
অবস্থান ভেদে ওয়েল্ডিং জোড়ের কৌশল বদল করতে হয়। ফ্লাট অবস্থানে ধাতু জোড়ের যে কৌশল ব্যবহার করা হয়। ওভার হেড অবস্থানে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। হরিজন্টাল অবস্থানে ধাতু-জোড়ের ক্ষেত্রে গলিয়ে ধাতু ততটা নিচের দিকে না পড়লেও উলম্ব অবস্থানে মাধ্যাকর্ষণ জনিত কারণে গলিত ধাতু নিচের দিকে পড়তে থাকে। তাই উত্তম জোড়ের জন্য হরিজন্টাল এবং উলম্ব অবস্থানে আলাদা আলাদা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ওভার হেড অবস্থানে মধ্যাকর্ষণের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। তাই আর্ক লেংথ ছোট রেখে, সঠিক কারেন্ট অ্যাডজাস্ট করে সঠিক গতিতে ধাতু জোড় দিতে হবে। ধাতু জোড়ের ক্ষেত্রে মধ্যাকর্ষণের প্রভাব যত বেশি থাকবে গলিত ধাতু তত শরীরের দিকে স্প্যাটার করতে থাকবে। তাই বিশেষ নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।
পেনিট্রেশন এর জন্য ইলেকট্রোডের আর্ক সর্বদা কম রাখতে হবে। ফ্লাট অবস্থায় ইলেকট্রোডকে ধাতুর জোড়ের দিকে ৭০°-৮০° কোণে এবং দুই পৃষ্ঠদেশ থেকে ৯০° কোণে রেখে সঠিক গতিতে ইলেকট্রোড জোড় দিতে হয়। হরিজন্টাল অবস্থায় মূল ধাতুর জোড়ের উপর নিচ থেকে ইলেকট্রোডকে ৪৫° কোণে রেখে সঠিক গতিতে ইলেকট্রোড চালনা করে ধাতু জোড় দিতে হয়। আবার ওভারহেড অবস্থায় ইলেকট্রোডকে ধাতু জোড়ের সাথে ৯০° কোণে রেখে ছোট আর্ক লেংথ কারেন্ট একটু বেশি অ্যাডজাস্ট করে সঠিক গতিতে ইলেকট্রোড চালনা করতে হয়। ইলেকট্রোড এর কোণ বেশি কম হলে ধাতুমল ঝরে পড়তে থাকবে। উলম্ব ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে ইলেকট্রোড এমন ভাবে ধরতে হয়, যাতে এটি আনুভূমিক রেখার প্রায় ১০-১৫ ডিগ্রি নিচে এবং অগ্র ভাগে আর্ক ক্রাটারের প্রায় ৩.২৫ মিমি উপরে থাকে।
সতর্কতা বলতে আমরা সাধারণত মানুষের সতর্কতাকে বুঝে থাকি, কিন্তু সতর্কতা বলতে মানুষ, টুলস ইকুপমেন্ট কাঁচামাল সবকিছুরই সতর্কতা বা নিরাপত্তাকে বুঝায়। ধাতু জোড়ের ক্ষেত্রে অবস্থান ভেদে নিরাপত্তা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ডাউন হ্যান্ড বা ফ্লাট পজিশনে নিরাপত্তা ঝুঁকি কম মনে হলেও অবহেলার কারণে ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঊর্ধাভিমুখী কিংবা নিম্নাভিমুখী ওয়েন্ডের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সীমাবদ্ধতা আছে, উভয় ক্ষেত্রেই গলিত ধাতু মাধ্যকার্ষণ শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঊর্ধ্বাভিমুখী উলম্ব এ ওয়েল্ডিং ধাতু আর্কের ভিতর হতে ক্রেটারের মধ্যে পতিত হয়। তারপর ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত নিচের দিকে গড়িয়ে পড়তে থাকে। এ গলিত ধাতুর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ইলেকট্রোড এর কোণ ঠিক রেখে, সঠিক গতি ও আর্ক লেংথ বজায় রাখলে সুন্দর জোড় দেওয়া সম্ভব। ওভারডেড ওয়েল্ডিং এর উপর উলেখযোগ্য ভাবে প্রতিফলিত হয় এবং যেহেতু ওভারহেড ওয়েল্ডিং ঢিবির আকৃতি ওয়েল্ড এবং আন্ডার কাট হয় সেহেতু ওভার হেড ওয়েল্ডিং পদ্ধতি প্রয়োগে অবশ্যই বিশেষ যত্নবান হতে হবে। গলিত ধাতু রুটের মধ্যে স্থাপনে আর্কের গতি পথের বল ব্যবহার করে ইলেকট্রোড ওয়েল্ডিং এর দিকে প্রায় ৮০° এবং উলম্ব তল হতে ২০° কোণে চালনা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ওয়েন্ডিং পজিশন বলতে কী বোঝায়?
২। হরিজন্টাল পজিশন কী?
৩। ভার্টিক্যাল পজিশন কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
৪। ওভার হেড পজিশন বলতে কী বোঝায়?
৫। ফ্লাট পজিশন বলতে কী বোঝায়?
৬। কৌণিক পজিশন বলতে কী বোঝায়?
রচনামূলক প্রশ্ন
৭। অবস্থান ভেদে ওয়েল্ডিং এর বুনন কৌশল বর্ণনা কর।
৮। অবস্থান ভেদে ওয়েল্ডিং এর চালনা কৌশল ব্যক্ত কর।
৯। অবস্থান ভেদে ওয়েল্ডিং এর সতর্কতা ব্যক্ত কর।